রবিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৯


সাবাই ষড়যন্ত্র ইতিহাস
-------------------------------------------
সম্প্রতি ইসলামি ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ কৌতুহলের কারনে গত কয়েক মাস ধরে ইসলামি ইতিহাসের অধ্যয়ণ চলছে। সেখান থেকে জানতে পারি সাবাইদের সম্পর্কে। সাবাইদের সম্পর্কে জানার কৌতুহলের কারনে বিভিন্ন গবেষনামূলক বই থেকে পাশাপাশি সাবাইদের সমর্থকদের লেখা থেকে জানার চেষ্টা করেছি তারা কি বলতে চাচ্ছে এবং আমি যা জেনেছি তা সকলের সাথে শেয়ার করছি যাতে যাঁরা জানে না তাঁরা জানতে পারে এবং যাঁরা জানে তাঁদের থেকে নতুন কিছু জানতে পারি।


দক্ষিন আরবের ইয়েমেন নিবাসী (নিগ্রো মায়ের গর্ভজাত ইয়াহূদী সন্তান) আব্দুল্লাহ ইবন সাবা নামক এক শিক্ষিত ধুরন্ধর ইয়াহূদী যিন্দীক তৃতীয় খলীফা উসমান রা. এর যুগে বাহ্যত ইসলাম গ্রহণ করে এবং গোপনে ইসলামকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এক বিরাট ষড়যন্ত্র আরম্ভ করে। উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য সে তিনটি পন্থা অবলম্বন করেঃ
. রাসূল সা. এর নামে জাল বা মিথ্যা হাদীস রচনা করে ইসলামের পবিত্রতা নষ্ট করা;
. মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ সৃষ্টি করে তাঁদের অগ্রগতিকে ব্যাহত করা এবং ;
. সাহাবীগণের নামে দুর্নাম রটনা করে ইসলামের প্রতি মানুষের আকর্ষণকে বিনষ্ট করা। কেননা পরবর্তী -সাহাবী লোকদের পক্ষে ইসলাম লাভের একমাত্র মাধ্যম ছিলেন সাহাবীগণ। সুতরাং তাঁদের প্রতি আস্থা বজায় না থাকলে কারো পক্ষে কুরআন-হাদীসে বিশ্বাস কিংবা ইসলামের প্রতি আকর্ষণের কোন সূত্রই অবশিষ্ট থাকে না।



ইবনে সাবার দৃষ্টিতে ইসলামী খিলাফতের কেন্দ্র মদীনা থেকে দূরে অবস্থিত মুসলমানদের প্রধান প্রধান সেনানিবাস বসরা, কূফা মিসরই ছিল তার কার্যের উপযুক্ত ক্ষেত্র। কারণ এসব স্থান একদিকে যেমন ছিল খলীফার দৃষ্টি থেকে বহু দূরে অবস্থিত, তেমনি সে সব স্থানে সৈন্যরা ছিল অধিকাংশই -সাহাবী নও-মুসলিম তরুণ, যাদের পক্ষে রাসূল সা. এর সাহচর্য লাভ করে ইসলাম সম্পর্কে পরিপক্ক হওয়ার কিংবা সরাসরিভাবে রাসূল সা. এর নিকট থেকে হাদীস লাভের কোন সুযোগ ঘটেনি।
তার দৃষ্টিতে হযরত আলী রা.- ছিলেন উপযুক্ত পাত্র যাঁর নামে মুসলমানদের ভেতর বিভেদ সৃষ্টি করা অত্যন্ত সহজ। কেননা তিনি হচ্ছেন রাসূল সা. এর নিকট আত্মীয় এবং ফাতিমা রা. এর স্বামী। ইবন সাবা তাই মদীনা থেকে বসরা গমন করে বলে বেড়াতে থাকে যে, হযরত আলী রা. রাসূল না. এর নিকট থেকে কুরআনের ইলম ছাড়াও এক বিশেষ ইলম প্রাপ্ত হয়েছেন এবং তিনি হচ্ছে রাসূল সা. এর ওসী। সুতরাং একমাত্র তিনিই হচ্ছেন খিলাফতের বৈধ হকদার। তাঁর ওপর দিয়ে অন্য কারো নেতৃত্ব চলতে পারে না, আবু বকর রা. উমর রা. রাসূল সা. এর বিপরীত কাজ করেছেন এবং উসমান রা. ব্যাপারে তাঁদের অনুসরণ করেছেন।



সে আরো বলতে থাকে যে, আবু বকর রা., উমর রা. এবং উসমান রা. এর প্রতি আলী রা. অসন্তুষ্ট কিন্তু বিশেষ কারণে তিনি তা প্রকাশ করছেন না।
সে আরো বলে বেড়াতে থাকে যে, আলী রা. মৃত্যুবরণ করেননি। তিনি এখনো জীবিত আছেন। তিনি মেঘের সাথে থাকেন। মেঘের গর্জন তাঁর আওয়াজ্ এবং বিদ্যুৎ তাঁর হাসি। ইবনে মুলজিম, আলী রা. কে নয় বরং তাঁর আকৃতির একটি শয়তানকে হত্যা করেছে। তিনি আবার দুনিয়ায় ফিরে এসে সব অন্যায় অত্যাচার দূর করে ন্যায় ইনসাফ কায়েম করবেন। এভাবে ইবন সাবা তার সাথীরা আলী রা. সম্পর্কে নানা প্রকার অলৌলিক কথা প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। এমনকি পরিশেষে তারা কথা বলতে শুরু করে যে, আলী রা. স্বয়ং খোদা বা খোদার আবতার।তারা আরো বলে বেড়াতে থাকে যে, রাসূল সা. এর পরিবার দুনিয়ায় আল্লাহতায়ালার ছায়া এবং তাঁরা নিষ্পাপ ত্রুটি হীন। আল্লাহর সমস্ত হিকমাত জ্ঞান তাঁদেরই ম্ধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।


বসরা মদীনা থেকে দূরে বিধায় প্রথমত আলী রা. এসব প্রচার-প্রপাগান্ডার কথা কিছুই জানতে পারেননি। আর দুন্ধর ইবন সাবাও এর গোপনীয়তার জন্য সকলের প্রতিই কড়া নির্দেশ নিয়েছিলো। বসরার শাসনকর্তা আব্দুল্লাহ ইবন আমির তার আচরণে সন্দেহ করে তাকে বসরা ত্যাগ করতে নির্দেশ দেন। বসরা ত্যাগ করে সে মুলমানদের দ্বিতীয় সেনানিবাস কূফায় প্রবেশ করে এবং অল্প সময়ের ম্ধ্যেই তরুন সৈন্যগণকে হাত করে নেয়। অতঃপর সে কূফা থেকে বিতাড়িত হয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করে সেখানে থেকে বিতাড়িত হয়ে মিসর উপস্থিত হয় এবং মিসরকে কেন্দ্র করে চারদিকে তার ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে থাকে।


পুনরায় সে বলতে থাকে যে, এক হাজার নবী পৃথিবীতে এসেছেন। প্রত্যেক নবীরই একজন ওসী ছিল। আর আলী রা. হলে মুহাম্মদ সা. এর ওসী। সে আরো বলতে লাগলো যে, মুহাম্মাদ সা. হলে সর্বশেষ নবী। আর আলী রা. হলেন, সর্বশেষ ওসী। সে উসমান রা. এর বিরুদ্ধেও ভিত্তিহীন অভিযোগ দাঁড় করিয়ে লোকদের খেপিয়ে তোলে। এভাবে একদিকে সে আলী রা. এর পক্ষ অবলম্বন করে এবং অন্যদিকে উসমান রা. এর বিরুদ্ধে লোকদেরকে খেপিয়ে তুলে এক প্রচন্ড আন্দোলনের সূত্রপাত করে। অল্পদিনের মধ্যেই সে আশাতীত সফলতা লাভ করে এবং তৃতীয় খলীফা উসমান রা. কে শহীদ করতে সমর্থ হয়।
অবশেষে আলী রা. তার খিলাফতকালে ইবন সাবার ষড়যন্ত্রের কথা অবগত হয়ে তার অনুচরদেরসহ তাকে পুড়িয়ে মারেন (যদিও এর মধ্যে ইবন সাবা ছিলো কিনা তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে) ইবন তাহির . রচিতআল-ফরকু বাইনাল ফিরাকগ্রন্থের ২২৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যে, আলী রা. যখন তাদেরকে আগুনে ফেললেন, তখন তারা বললো, এখন আমরা নিশ্চিত হলাম যে, আপনিই আমাদের খোদা। কেননা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কেউ কাউকে আগুন দ্বারা শাস্তি দেয় না।



আলী রা. সম্পর্কে ইবন সাবা তার সাথীরা যে সব কথা বলে বেড়াত, তা শুনে তিনি নিজেই অবাক হয়ে যেতেন। তিনি কঠোর ভাষায় এর প্রতিবাদও করেছেন। তিনি ইবন সাবাকে লক্ষ্য করে একথাও বলেছেন, কিয়ামতের পূর্বে ত্রিশজন মিথ্যাবাদী আগমনের যে খবর দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে তুমিও একজন। ইবন সাবার কথা শুনে চরম ক্ষোভ দুঃখের সাথে মাঝে মধ্যেই আলী রা. এর মুখ দিয়ে এরুপ কথা বেরিয়ে যেত, কালো খবীসের সাথে আমার কি সম্পর্ক
কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, খিলাফতের গুরু দায়িত্ব পালন এবং নানা প্রকার দ্বন্দ্ব সংঘর্ষে ব্যস্ত থাকায় আলী রা. সাবায়ীদেরকে সম্পর্ণরুপে নির্মুল করার সুযোগ পাননি। হলো সাবায়ী ষড়যন্ত্রের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
(তথ্যসূত্র: পৃ: ১২৪-১২৬, রিজাল শাস্ত্র জাল হাদীসের ইতিবৃত্ত, . মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন, ইসলামি ফাউন্ডেশন )
এই সাবাই চক্র, ইবনে সাবা এবং তৎকালীন ফিতনা সম্পর্কে আরো তথ্যবহুল আলোচনা করেছেন আল্লামা . আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি তার গবেষণামূলক গ্রন্থ উসমান ইবনে আফফান রা. জীবন কর্ম নামে বইটিতে যা বাংলায় অনুবাদ করেছে কালান্তর প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৫৩৩ থেকে ৫৫৫ পৃষ্ঠার মাঝে উসমান রা. হত্যা ফিতনা সংক্রান্ত আলোচনায়
যদিও সাবাই চক্রের সমর্থক সংখ্যা কম নয়। তারা বিশ্বাস করে আব্দুল ইবনে সাবা নামে নাকি কেউ ছিলোই না। অবশ্য তারা বিশ্বাস করতেই পারে কেননা তারা হচ্ছে সেই গ্রুপ যারা রাসূল সা. এর প্রিয় সাহাবীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে এবং তাদের চরিত্রের উপর কলঙ্ক লেপন করে থাকে। তাদের সম্পর্কে যতটুকু এখন পর্যন্ত জানার সুযোগ হয়েছে তাহলো তারা সম্মানিত কাউকে বিতর্কিত করতে চাইলে ব্যাক্তি চরিত্রের উপর আঘাত হানে ফলে সাধারণ মানুষ মনে সহজেই সংশয় সৃষ্টি হয়।
আমি তাদের লিখিত ব্লগও সকলের সাথে শেয়ার করছি যাতে যেখানে তারা ইবনে সাবার সম্পর্কিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের যে ধারনা তার বিপরীত মত প্রকাশ হয়েছে এবং অনেক তথ্য প্রমান দেওয়ার চেষ্টা করেছে যা আহলে সুন্নাতুল জামাত এর বিশ্বাসের পুরো বিপরীত।
. সাবাই সমর্থক গ্রুপের ব্লগ লিংক
. সাবাই সমর্থক গ্রুপের ব্লগ স্ক্রিনশট লিংক দিয়ে দিচ্ছি।



নোট: সকলের সাথে জ্ঞান শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই আমার বই রিভিউ পোষ্টটি শেয়ার করা। যদি কোনো ভুল-ভ্রান্তি থেকে থাকে দয়া করে ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখে ভুলগুলো সংশোধন করে দিবেন যাতে আমি এবং সকলে সঠিকটি জানতে পারি।